ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​সংস্কারের মধ্যেই চলবে নির্বাচনের প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৪ ১০:১৪:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০১-১১-২০২৪ ০৩:৫০:২৭ অপরাহ্ন
​সংস্কারের মধ্যেই চলবে নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রতীকী ছবি
নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশার চাপ বাড়ছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পর এর প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এতে রাষ্ট্র সংস্কারে অগ্রাধিকার দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়ছে। চাপ আসছে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও। তবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো রোডম্যাপ না দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’ 
অন্যদিকে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে রাষ্ট্রের ও রাজনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলো সম্পন্ন হবে না। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে প্রত্যাশা তা অপূর্ণই থেকে যাবে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার চাপ দেবে; এটাই স্বাভাবিক। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এর সাথে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও চলতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে শুধু প্রয়োজনীয় সংস্কার করলেই হবে। দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা ও নির্বাচন সম্পর্কিত সংস্কার সম্পন্ন করার মাধ্যমে সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সংকট আরও গভীর হতে পারে। 
তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাগুলোতে আগামী নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে; তা নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোরও আগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্প্রতি একাধিক আলোচনায় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবনা জানতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাময়িক হিসেবে সবাই বিবেচনা করছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা বাড়বে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থনও কমতে পারে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই এটি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও চলতে পারে। 
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নয়, জনগণও নির্বাচন চায়। এ অবস্থায় রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে দলগুলো আশ্বস্ত হবে এবং দেরি হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার করা উচিত। তার মতে, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। তবে এর আগে পুরো নির্বাচনীব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের। ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। চলতি বছরের মধ্যেই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। এরপর রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সবার পরামর্শের ভিত্তিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে সে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কার্যকরি আভাস দেওয়া হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এটিকে সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত মত বলে উল্লেখ করেন।
এরপর গত ১৭ অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করাটা হয়তো সম্ভব হতে পারে। অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এটা প্রাইমারি অ্যাজাম্পশন (প্রাথমিক অনুমান)। এই বক্তব্য পরদিনের সংবাদপত্রগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হলে তিনি তার ফেসবুক পেজে লেখেন, নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ডিসিশন। এর সময় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঠিক হবে। তিনিই একমাত্র এটা ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন। 
এরপর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা, আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় আসিফ নজরুল রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ১৬ বছর ধৈর্য রেখেছেন এখন ধৈর্যহারা হলে হবে না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দিনের পর দিন ভরসা রেখেছি, কিন্তু তারা করেনি। হাজার হাজার মানুষ নিকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দেয়নি, উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সে জন্য শুধু নির্বাচন দিলে হবে না। আমাদের সংস্কারও করতে হবে। 
এদিকে সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বিএনপি মনে করে, শুধু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারই যথেষ্ট। দলটি বলছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে অন্য সংস্কারগুলো করা সম্ভব হবে। সাংবিধানিক বিধান এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করে সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে পরামর্শও দিয়েছে বিএনপি। এই অবস্থান থেকেই দলটি রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে এবং দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে বলে জানান বিএনপির নেতারা। তবে জামায়াত সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এদিক থেকে বিএনপির সঙ্গে দলটির অবস্থানের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। জামায়াত যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। তবে বিলম্বিত নির্বাচন চায় না। 
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আমরাও নির্বাচন চাই। গত ১৫ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সামনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আমরা সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছি; কিন্তু তাই বলে নির্বাচন বিলম্বিত হোক; তা চাই না।

বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এএইচ/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ